মুমিনদের নিকট শানে রিসালাত যেমন সবচে স্পর্শকাতর বিষয়, যে ব্যাপারে তারা কখনোই আপস করতে পারে না, একইভাবে নদীর তীরের দলটির নিকট শানে ডেমোক্রেসি (গণতন্ত্র) এমনই সেনসিটিভ বিষয়, যা নিয়ে ন্যূনতম সমালোচনাও তারা সইতে পারে না।
অথচ যেসব ঠুনকো দলিল দিয়ে গণতন্ত্রের বৈধতা প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা হয়, এরচে অনেক ভারী দলিল দিয়ে দুনিয়ার বহু বিদআত ও হারামকেও সহজেই বৈধতা দেওয়া যাবে। অপব্যাখ্যার দুয়ার একবার খোলা হলে প্রত্যেকেই নিজের ধারার যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়গুলো সিদ্ধ করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
এরা সারাদিন জামাআত ও ইখওয়ানের সমালোচনা করে, অথচ তাদের গৃহীত রাজনৈতিক আদর্শগুলোই শক্ত হাতে আঁকড়ে থাকে। এরা ২০২২ সালে এসে নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের পক্ষে যেসব কুযুক্তি দিচ্ছে, আরও বহু যুগ আগে উক্ত দলের নেতাকর্মীরা এসব যুক্তি দিয়ে এসেছে। তাহলে দিনশেষে এরা ওদের সমালোচনা করার বৈধতা আর কই থাকল! মিলেমিশে সবই তো একাকার হয়ে গেল।
রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও মতাদর্শের ক্ষেত্রে ভুল অনেকেরই হয়েছে, কিন্তু এত জঘন্য জঘন্য তাহরিফ (অপব্যাখ্যা) অতীতে কেউ করেনি। এত বেশি বিদ্বেষ ও শত্রুতাও অতীতে কারও থেকে দেখা যায়নি। দল যত বড় হচ্ছে, উগ্রতা ততই বাড়ছে। ইসলামের নামে এদের মতো চরমপন্থী দল দেশে দ্বিতীয় কোনোটা আছে কি না, আমার জানা নেই।
এরা এদের দলের নাম পালটে হেফাজতে গণতন্ত্র বাংলাদেশ নাম দিলেই পারে। কারণ, এই এক ইস্যুতে সেক্যুলাররা যতটা না ক্ষ্যাপে, এরা এর চাইতে হাজারগুণ বেশি ক্ষ্যাপে। সেক্যুলাররা চুপচাপ শুনে গেলেও এরা সর্বোচ্চ স্বরে ঘেউ ঘেউ করতে করতে ছুটে আসে। পারলে যেন ছিঁড়েফেঁড়ে খাবে, এমনই এক অবস্থা। বেয়াদবি ও গালাগালিতে নোবেল দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে এদের নাম প্রস্তাব করা যেত।
দেশে আটরশি, মাইজভান্ডারি, চন্দ্রপাড়া ও দেওয়ানবাগীর দলও ক্ষুদ্র না। দল বড় হওয়াই কোনো হকের দলিল না। তবে এদের অধিকাংশের আচরণ দেখলে মনে হয়, এদের অন্তরে কেমন যেন মোহর মারা। যার কারণে তাতে কোনো ধরনের হিদায়াত প্রবেশ করার দূরতম লক্ষণও নজরে পড়ে না।
এরাও মুখে কুরআনের কথা বলে; কিন্তু কুরআনের দলিলকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহ তো আর এমনি বলেননি, 'তিনি কুরআনের দ্বারা অনেককে বিপথগামী করেন আর অনেককে সুপথে পরিচালিত করেন'।
তোমরা শানে গণতন্ত্র হেফাজত করতে থাকো। আমরা ইনশাআল্লাহ শানে রিসালাত ও তরিকায়ে নবুওয়াতকে প্রাণের বিনিময়ে হলেও হেফাজত করে যাব। তোমরা স্বঘোষিত মুরিদরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জিহাদ চালাতে থাকো। আমরা ইনশাআল্লাহ ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার কোশেশ করে যাব। তোমরা উম্মাহকে পাশ্চাত্যের গোলাম বানানোর মিশন চালাতে থাকো।
আমরা ইনশাআল্লাহ জাতিকে সরল সঠিক পথই দেখিয়ে যাব। তোমাদের পূর্বে গত শত বছরে এ পথে চলে এক ইঞ্চি মাটিতেও কেউ ইসলাম কায়েম করে দেখাতে পারেনি। তোমাদেরও কেয়ামত পর্যন্ত সময় দেওয়া হলো। পারলে কোনোদিন গালগল্প ছেড়ে আধা ইঞ্চি মাটিতে ইসলাম কায়েম করে দেখিয়ো।
সালাম তাদের, যারা তোমাদের ফাঁদে পা না দিয়ে মুজাদ্দিদে আলফে সানি, শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি ও তাদের যোগ্য উত্তরসূরিদের পথে চলে। এমনকি সালাম তাদের, যারা নব্য জাহিলি সমাজে থেকেও নিজেদের বসনকে কুফরের কালিতে কলঙ্কিত না করে মক্কিযুগের মতো উম্মাহকে হক ও বাতিল চেনানোর প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে থাকে। হক জিন্দাবাদ, বাতিল মুর্দাবাদ। শানে রিসালাত জিন্দাবাদ, শানে ডেমোক্রেসি মুর্দাবাদ।