আবু হানিফার গুণগান গাইলে কতক ভাই খুশি। আবার বিপক্ষে লিখলে তাকে বেয়াদব বা উগ্র বলা হচ্ছে। ব্লক বা আন-ফ্রেন্ড এর হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। ব্লক বা আন-ফ্রেন্ড করতে হবে কেন? আবু হানিফার জারাহ পোষ্ট করে কেউ কি মুসলিমের গণ্ডি থেকে খারিজ হয়ে গেছে নাকি? সে কি কাফের হয়ে গেছে যে, তাকে ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ছিটকে ফেলতে হবে?
আবু হানিফা মানুষ ছিলেন। ফেরেশতা ছিলেন না। সুতরাং তার ভুল থাকবেই। বরং এটা দিবালোকের মতো সত্য যে, তার প্রচুর ভুল-ত্রুটি রয়েছে। এ কারণেই তার ছাত্ররা তার ফতোয়ার তিন ভাগের দুই ভাগ-ই দেওয়ালে ছুড়ে মেরেছেন। উস্তাদের ব্যাপারে কটু মন্তব্য করেছেন। তার ছাত্ররা কি অন্যায় করেছেন, নিশ্চয়ই না। তারা তাদের উস্তাদকে যে অবস্থায় দেখেছেন তাই বর্ণনা করেছেন, ব্যাস!!
(২)
মাযহাবীরা আবু হানিফাকে ক্ষেত্র বিশেষে রসুল ﷺ এর উপরে মূল্যায়ন করে থাকে। এই কারণেই তারা আবু হানিফার জারাহগুলো সহ্য করতে পারে না। কোথায়ও আবু হানিফার জারাহ দেখলেই সনদ নিয়ে টানা-হ্যাঁচরা শুরু করে। যেমনটি করেছেন আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহি) তার ফিকহুল আকবার বইটির মধ্যে। অথচ তার জারাহগুলোর খণ্ডন যে ত্রুটিমুক্ত ছিল না, তা এ খণ্ডনগুলো স্টাডি করলেই বুঝা যায়। শায়েখ হানাফি ঘেঁষা ছিলেন, তাই তিনি আবু হানিফাকে ডিফেন্স করার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। আল্লাহ শায়েখকে ক্ষমা করুন।
শায়েখের মতো অন্য হানাফিরা তাদের ইমামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই তো ফতোয়ায়ে শামি সহ হানাফি মাযহাবের কিছু কিতাবের হাওলা দিয়ে বলা হয় যে,
“ইমাম আবু হানিফা ২ লক্ষ হাদিসের হাফেজ ছিলেন, প্রতিদিন ৫০০ রাক’আত সালাত আদায় করতেন, রসুল ﷺ কে ১০০ বার স্বপ্নে দেখেছেন, ৫৭ বার হজ্জ্ব ও উমরা করেছেন, ৪০ বছর একটানা এশার ওযু দ্বারা ফজরের সালাত আদায় করেছেন, ৩০ বছর একটানা রোজা রেখেছেন, বছরের যেই পাঁচদিন রোজা রাখা হারাম, সেই পাঁচ দিন তিনি রোজা রাখেন নাই, তবে সেই ৫ দিনও তিনি কোন খাবার গ্রহণ করেন নাই, আবু হানিফার সকল অনুসারীদেরকে মহান আল্লাহ অগ্রিম মাফ করে দিয়েছেন, কারণ তিনি কাবা ঘরের ভিতরে ২ রাক’আত সালাত পড়েছেন এভাবে -ডান পায়ে দাড়িয়ে ১৫ পারা কোরআন পড়েছেন; বাম পায়ে দাড়িয়ে বাকী ১৫ পারা পড়েছেন। মানে পুরো কোরআন খতম করেছেন মাত্র ২ রাক’আত সালাতে, ব্লা ব্লা, ব্লা!!”
(৩)
বাংলাদেশের বরেণ্য এক আলেম কোনো এক ওয়াজে বলেছিলেন আহলে হাদিসগণ নাকি ইমাম আবু হানিফাকে গালি দেয়। লুৎফুরগং ও তাদের অন্ধ অনুসারীরাও এমনটা প্রচার করে থাকে। অথচ আজ এক যুগেরও বেশী হলো আহলে হাদিস আলেমদের ওয়াজ শুনছি। তাদের সাথে উঠবস করছি। কোনো আহলে হাদিসের বাচ্চাকে দেখলাম না আবু হানিফাকে গালি দিতে! এটা আহলে হাদিসদের প্রতি মাযহাবীদের একটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই না।
তবে এটা সত্য যে, সত্যিকারের আহলে হাদিসদের কেউ আবু হানিফার নামে উপরোক্ত আজগুবি কথাগুলো এক দণ্ডও বিশ্বাস করে না। যদিও মাযহাবীরা এগুলোকে ইমাম আবু হানিফার করামত বলে প্রচার করে থাকে। লুৎফুর গং রা এর কিছু কিছু সনদও পোষ্ট করে বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে। অথচ তাহক্বীক করে আমরা বুঝতে পারি যে, ঐ সনদ গুলোর অবস্থা যাচ্ছে তাই!
মূলত আবু হানিফার প্রশংসা মূলক প্রায় সকল বক্তব্যই সনদ গত ভাবে দুর্বল। যারা আবু হানিফার বিপক্ষের জারাহ শুনলেই গীবত বলে চিল্লা-ফালা শুরু করে দেন, সনদ যাচাই বাছাই করতে লেগে যান। সনদ সহি বা হাসান হলেও মিথ্যে ডিফেন্স করতে লেগে যান, তারা তাদিলের সময় সেইম কাজটি কেন করেন না? ইনসাফ ইনসাফ বলে চিৎকার করতে থাকা আপনারা তাদিলের সময় ইনসাফ করেন না কেন? সত্য মেনে নিতে এত ভয় কিসের?
(৪)
ইমাম আবু হানিফা যেহেতু প্রচুর ভুল করেছেন, আপনাদের নিকট অনুরোধ, জারাহ তাদিলের সাথে সাথে তার নাম বিক্রি করে তৈরি হওয়া হানাফি মাযহাবের ভুল-ত্রুটি নিয়েও লিখুন। কারণ চার মাযহাবের মধ্যে এই হানাফি মাযহাব-ই সবচাইতে বেশী ভুলে ভরা মাযহাবে। এই মাযহাবের ভুল আমলগুলো হয় জাল/জঈফ হাদিস নির্ভর অথবা জাস্ট কিয়াস নির্ভর। যেখানে কোরআন হাদিসের কোনো ছায়াও নেই!
তাছাড়া আমাদের সমাজে প্রচলিত অনেক বিদ’আতী আমলের সাথে হানাফি মাজহাবেরও কোনো সম্পর্ক-ই নাই। যদিও নামধারী হানাফি হুজুররাই এই বিদ’আতী আমলগুলোর চর্চা বেশি করে থাকেন। যেমন প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম, দলবদ্ধ-সংঘবদ্ধ জিকির, দলবদ্ধ হয়ে দু’আ/মুনাজাতের আয়োজন করা, কারো মৃত্যুর পর চল্লিশা বা কুলখানির করা, সালাতের পর সম্মিলিত মুনাজাত প্রভৃতি। এই জাতীয় বিদ’আতী আমলের পক্ষে আবু হানিফার কোন কওল পাওয়া যায় না, এমনকি মাযহাবের কোনো কিতাবেও এগুলোর পক্ষে কোন বর্ণনা নাই!
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ফিতনা-ফাঁসাদের সময় হক্ব দ্বীনের উপর অটুট থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন...!