সউদী আরবের জাতীয় দিবসে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত একটা পোস্ট করে যেমন নন্দিত হয়েছি তেমনি নিন্দিতও কম হইনি। অনেকে নাকি প্রচন্ডভাবে ব্যথিত হয়েছেন। তাদের এই ব্যথাকে প্রশমিত করার লক্ষেই এই পোস্টটি। একটা সফরে রয়েছি। একান্ত নিরিবিলি পরিবেশে। একাকীত্ব ঘুঁচাতেও পোস্টটি বলা যেতে পারে। একটা লেখা লিখে যে শুধু বাহবা কিংবা প্রশাংসাই কেবল পাবো এটা ধারণা করা নিছক বোকামি। সমালোচনা সহ্য করারও মানসিকতা থাকতে হবে। তবে বড় দুঃখ লাগে যখন অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত ও সাধারণ /জেনারেল শিক্ষিত লোকদের পক্ষ হতে অশালীন ভাষায় সমালোচনার তীর এসে বুককে ঝাঁঝরা করে দেয়। আমি সর্বদা ইলমী আলোচনা পর্যালোচনা পছন্দ করি। এর মাধ্যমে ভাল একটা হক বের হয়ে আসতে পারে। আমি স্বয়ং আমার লিখনিতে উল্লেখ করেছিলাম যে শাইখ বিন বায রহঃ ও শাইখ উসাইমীন রহঃ জাতীয় দিবসের ন্যায় দিবসগুলিতে অংশগ্রহণকে বিদয়াত বলেছেন। আমি কোন কিছু তথ্য গোপন করাকে খিয়ানত মনে করি। তারপরেও অনেকের এই দুই শাইখের ফাতাওয়াকে বারংবার উল্লেখ করাকে আমি যথার্থ ও যুক্তিযুক্ত মনে করিনা।
শাইখ আলবানী রহঃ এর একটি চমৎকার অবস্থান রয়েছে। তিনি বলেন তারবুশ নামক একপ্রকার বিশেষ টুপি যেটা তুীকী সুলতানগণ পরে থাকেন সেটি তারা অস্ট্রিয়া হতে অনুকরণ করেন। ফলে সেটি অমুসলিমদের অনুকরণ করার কারণে প্রথম দিকে হারাম ছিল। কিন্তু এটি মুসলিমদের মাঝে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পরার কারণে মুবাহ তথা বৈধতার মধ্যে পড়ে যায়। তিনি আরো বলেন পেন্ট পরিধান করা এক সময় হারাম ছিল কেননা এটি ইয়াহুদী-নাছারাদের পোশাক ছিল কিন্তু এটির হুকুম এখন মুবাহ পর্যায়ের কেননা মুসলিমরা এটিকে ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে ফেলেছে।
অনুরূপ আমরা বলতে পারি জাতীয় দিবসগুলি যদিও একটা সময় কেবল ইংরেজরাই পালন করতেন কিন্তু এখন এটি প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশ উদযাপন করে সুতরাং এটিও বৈধতার মধ্যে পড়ে যায়।
তাছাড়া এটি এমন নয় যেে সেই সুনির্দিষ্ট দিনেই উদযাপন করতে হবে। যেমন ২৩ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে এবার ঢাকায় ২৫ সেপ্টেম্বর দিবসটি উদযাপন করা হলো।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলে যে এটি ইবাদতের কোন অংশ মনে করে করা হয়না বরং এটি কালচার ও আদাতগত দৃষ্টিকোণ হতে করা হয়ে থাকে।
সউদী আরবের প্রখ্যাত আলেম, মসজিদে কূবার সাাবেক খতীব শাইখ সলেহ আল মুগামেসী হাফিঃ বলেনঃ জাতীয় দিবসগুলি ইবাদতের কোন অংশ মোটেও নয় বরং এগুলি
من جنس المباحات
বৈধতার পর্যায়ভুক্ত। কেননা এগুলি আদাত ও অভ্যাস কিংবা কালচারাল একটি বিষয়।সুতরাং জাতীয় দিবস উদযাপনে কোন সমস্যা নেই।
সউদী আরবের বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়াতুল ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের এক সময়ের চেয়ারম্যান, বর্তমান সিনিয়র প্রফেসর ডক্টর আবদুল আযীয ফাউযান বিন সলেহ আল ফাউযান বলেনঃ
لا يظهر لي مانع شرعي من تخصيص يوم للوطن كما هو حال دول العالم في عصرنا الحاضر
অর্থাৎ স্বদেশের জন্য একটি দিনকে সুনির্দিষ্ট করে নেয়ায় আমি শরঈ দৃষ্টিকোণ হতে কোন সমস্যা দেখিনা, যেটি বর্তমানে সমকালীন বিশ্বের প্রতিটি দেশেই লক্ষনীয়। তবে তিনিও শালীনতার শর্তারোপ করেছেন।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। যেহুতু মহান আল্লাহ বলেছেন তোমরা মহান আল্লাহর দিবসগুলিকে কেন্দ্র করে মানুষকে উপদেশ প্রদান করো।
তারপরেও বলবো আল্লাহর কোন বান্দা যদি এ সমস্ত দিবস পালন ও উদযাপন হতে নিজেকে বিরত রাখেন তবে তিনি নিন্দিত হবেন না বরং প্রশংসিত হবেন।
والله أعلم بالصواب وإليه المرجع والمٱب.
ড. Abdullah Farooque (হাফিযাহুল্লাহ)
সভাপতি,বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস