ইসলামোফোবিয়া ইন দ্য ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড নতুন বই

ইসলামোফোবিয়া, বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর এক ভয়ঙ্কর মাধ্যম।


 • ফোবিয়া-বিশেষ কোনো বস্তু বা বিষয়ের প্রতি অহেতুক ভয় পাওয়াকে বুঝায়। ফোবিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ভয় স্বাভাবিক ভয় পাওয়ার তুলনায় অপ্রত্যাশিত ও অমূলক। বিভিন্ন ধরনের ফোবিয়া থাকলেও সবচে বেশি যে ফোবিয়ার আলোচনা হয়ে থাকে, সেটি হচ্ছে-ইসলামোফোবিয়া। 

• ইসলামোফোবিয়া, বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর এক ভয়ঙ্কর মাধ্যম। এটা কোনো দু-এক দশকের কথা নয়। এটা চলে আসছে হাজার বছর ধরে। শত্রুর মানসপটে মুসলিমদের বিজয়গাথার শুরু থেকেই চলে আসছে এই হিংসা, বিদ্বেষ আর মিথ্যা ছড়ানোর পশ্চিমা কূটচাল। মুসলিমদের জঙ্গি কিংবা উগ্রপন্থি খেতাব দিয়ে এখনো চলছে সারাসি আক্রমণ। তাদের চোখে দাড়ি টুপি আর পাঞ্জাবী-জুব্বা মানেই একরকম উগ্রপন্থা অবলম্বন। মূলত ইসলামের প্রতি ভয়-ভীতি, ইসলামবিদ্বেষ বা ইসলামবিরোধী মনোভাব। অন্যকথায়, "ইসলামোফোবিয়া" হচ্ছে নিন্দার্থে এবং ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত শব্দ, যা পশ্চিমা রাজনৈতিকদের বর্ণবাদী আবিষ্কার। 

• আপনি কখনো শুনবেন না খ্রিস্টানোফোবিয়া, কখনো শুনবেন না জুদাফোবিয়া, বোদ্ধাফোবিয়া কিংবা হিন্দুফোবিয়া। অথচ আপনি অবশ্যই শুনে থাকবেন এই ইসলামোফোবিয়া শব্দটি। শব্দটিতে মিশে আছে পশ্চিমাদের চরম হতাশা আর ঘৃণা। মূলত পশ্চিমাদের সাদা কালো মিডিয়াগুলো ইসলামের মিথ্যা অপব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ জনগণের আতঙ্ক বাড়িয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। যার প্রভাব পড়ছে মুসলিম সভ্য সমাজে। বেড়ে চলছে মুসলিমদের প্রতি বিধর্মীদের উগ্রপন্থী আচরণ।

• ইসলাম-পরিপূর্ণ এক জীবনব্যবস্থা। বলা হয়, ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম। অথচ এই ইসলামের নাম শুনলেই সমাজের একদল লোক অজানা আতঙ্কে আৎকে উঠেন। আজ নয়, ইসলামের প্রতি এই আতঙ্ক, এই ঘৃণার প্রচলন হয়ে আসছে শত বছর আগে থেকেই।  মুসলিম জাতিকে, বিশ্ব সভ্যতা বিনির্মাণে মুসলিম জাতির অবদানকে আর ইসলামকে হেয় করতে, প্রশ্নবিদ্ধ করতে পাশ্চাত্যে এর প্রচলন শুরু হয় "ইসলামোফোবিয়া" ট্যাগ দিয়ে। কিন্তু আজ এই "ইসলামোফোবিয়া" শুধু পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোতেই নয়, পশ্চিমা মিডিয়ার কল্যাণে মুসলিম প্রধান রাষ্ট্রগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে ভয়ঙ্করভাবে। এমনকি ইসলামোফোবিয়ার এই ভয়ঙ্কর বিষ দাঁত কামড়ে ধরেছে মুসলিম পরিবারগুলোকেও।  সন্ত্রাসবাদী ও বর্ণবাদী পশ্চিমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের স্বীকার হয়ে অমুসলিম তো বটেই, ইসলামের প্রতি মুসলিমদের মাঝেও দেখা যায় এখন চরম অনীহা আর আশঙ্কার। ফলে ইসলাম নিয়ে মুসলিমদের মাঝেই তৈরি সংশয়ের, প্রশ্ন উঠে স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে। আর এই সবকিছুই মুসলিম তরুণদের মনে সৃষ্টি করছে নাস্তিকতার নিরেট ভেজাল কিংবা ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব। আজও বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রতি ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়াতে পশ্চিমা মিডিয়াগুলো কাজ করে যাচ্ছে লাগাতারভাবে।

• "ইসলামোফোবিয়া" বৃদ্ধির মূল ফ্যাক্টর হিসেবে "নাইন-ইলিভেন" কে ধরা হলেও বিশ্বব্যাপী ইসলামোফোবিয়া ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে পশ্চিমাদের ভয়ঙ্কর এজেন্টসহ বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাগুলো। কখনো মুসলিমদের অস্ত্র সহায়তা দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে, কখনো বা নিজেদের সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এই "ইসলামোফোবিয়া"। আবার কখনো বা উগ্রপন্থী ট্যাগ দিয়ে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে জনমনে তৈরি করা হচ্ছে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব কিংবা অহেতুক ভয়। 

• শুধুমাত্র ইসলামোফোবিয়াকে ছড়িয়ে দিতে ব্যয় করা হচ্ছে লাখ লাখ ডলার। আমেরিকান প্রোগ্রেস ডট ওআরজি-র ইস্যু অফ রিলিজিয়ন রিপোর্ট অনুসারে, শুধুমাত্র ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ইসলামোফোবিয়া তথা ইসলামের প্রতি ঘৃণা ও ভয় ছড়াতে ৪২.৬ মিলিয়ন ডলারের অনুদান। ফলে প্রতিনিয়ত আক্রমণের স্বীকার হচ্ছে সাধারণ মুসলিমরা। 

• ইসলামোফোবিয়ার বলি হয়ে মুসলিমদের জীবন দিতে  হয়েছে প্রতি শতকেই। এখনও মুসলিমদের রক্ত ঝরছে প্রতিনিয়ত। ভয়ঙ্কর ক্রুসেডের কথা আমাদের সবারই জানা। যা এখনও চলছে। তবে ভিন্ন প্রক্রিয়ায়, ভিন্ন সূত্রে। এছাড়াও খ্রিস্টানরা আন্দালুসে মুসলিমদের উপর কিরূপ গণহত্যা চালিয়েছিল তাও আমাদের জানা। এত দূর যেতে হবে না, কিছুদিন আগেই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো হয়, মায়ানমারের রোহিঙ্গা, চীনের উইঘুর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ইরাক, ইয়েমেন, এমনকি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও মুসলিমরা চরম নির্যাতনের স্বীকার। "ইসলামোফোবিয়া"-র চরম ব্যবহার পরিলক্ষিত হয় ফ্রান্সে মহানবী সাঃ এর ব্যঙ্গচিত্র উপস্থাপন করার মাধ্যমে। আজ মুসলিমরা ইসলামোফোবিয়ার নিষ্ঠুর কষাঘাতে আহত। নিজ দেশেই অনিরাপদ। 

• শত্রুর পদাতল ধূলিসাৎ করে, ঘোড়ার ক্ষুরে পদানত করে, তরবারির আঘাতে জীর্ণ করে দিগ্বিদিক তাওহীদের পতাকা উড়িয়ে চলা মুসলিম জাতি এখন প্রায় নিস্তেজ। যার মূল কারণ পশ্চিমাদের এই ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডা। আর এই মুসলিমবিদ্বেষী মনোভাব। তাই আমরা সাধারণ মুসলমানদের উচিত পশ্চিমাদের এই প্রোপাগান্ডা, এই সাংস্কৃতিক আর বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনের প্রতি সচেতন থাকা, সতর্ক হওয়া।

• "ইসলামুফোবিয়া" বইটির সংক্ষিপ্ত পিডিএফটিতে যতটুকু পড়েছি তা ইসলামোফোবিয়া নিয়ে ভাবতে আমাকে নতুনভাবে আগ্রহী করে তুলেছে। মুসলিম জাতির এই সংকটাপন্ন সময়ে ইসলামোফোবিয়াকে নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে আর চিন্তার জগতে আলোড়ন তুলতে যেকোনো পাঠককেই আগ্রহী করে তুলবে বলে আমি মনে করি। আমরা যে আজ পশ্চিমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসনে কতটা জর্জরিত তা হয়তো বলতে পারবো না। কিন্তু আমাদের সমাধানের পথ, আমাদের ক্ষত নিরাময়ের উপায় আমাদেরকেই বের করতে হবে। হয়তো এই বইটি পড়ে আপনি পশ্চিমা প্রোপাগান্ডাকে সমূলে উৎখাত করতে পারবেন না, কিন্তু নিজেকে তাদের আগ্রাসনের চেয়ে অন্তত এক বিঘত দূরে রাখা যথেষ্ট হবে। 

ফাউন্টেন পাবলিকেশনকেও ধন্যবাদ এমন একটি বই পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য। ইনশাআল্লাহ সামনেও এমন সব বই পাঠকের মাঝে তুলে ধরে চিন্তার খোরাক জাগাবেন, খুলে দিবেন হাজারো সমস্যা সমাধানের সহজ পথ।

Read Also :

Getting Info...

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.